Job

Focus Writing in Bengali: “শিল্পায়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব” এ উক্তিটির পক্ষে অথবা বিপক্ষে তোমার মতামত তুলে ধর।

Created: 3 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago
Ans :

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন 

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন হলো দূষণমুক্ত শিল্পায়ন। পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়নকে সবুজ শিল্পায়ন নামেও অভিহিত করা পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য বর্তমানে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সারা বিশ্ব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব জন্য উন্নত ও প্রভাবশালী দেশগুলো প্রধান অন্তরায়। 

যেসব শিল্প কারখানা পরিবেশবাদ নয় সেসব কারখানাগুলোর জন্য বায়ু, মাটি, পানিও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এর বছ পরিবেশ দূষণের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে। পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ সহ অন্যান্য জীব-জন্তুর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে আমাদের এ সুন্দর ধরণী ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।

শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও শিল্প বর্জ্য পানি, বায়ু, মাটিতে মিশে পরিবেশ দূষিত করছে। পরিবেশ দূষার ফলে উষ্ণতা বাড়ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে হুমকির মুখে সারা বিশ্ব। এর থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় পরিবেশ বাস্তব শিল্পকারখানা।

বর্তমানে পরিবেশকে সুরক্ষা দিতে কিয়েটো প্রটোকল, উলানবাটোর সম্মেলন, কোপেনহেগের সম্মেলনসহ সারা বিশ্বের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বকে নিরাপদ করতে পরিবেশ দূণষমুক্ত রাখতে এসব সম্মেলন থেকে গৃহীত সকল শর্ত মোছ চলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমানে পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়নে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধ গার্মেন্টস অরখানার ৭টি-ই বাংলাদেশে। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য আমাদের একদিকে বিলাসিতা বর্জন করতে হবে তেমনি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য চেষ্টা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য একদিকে যেমন শিল্পকারখানাগুলোর দূর্গ রোধ করতে হবে অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার ব্যবহার কমাতে হবে। জাপান ও যুক্তরাজ্য তাদের কয়লাভিতি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশগুলোরও উচিত এরকম পদক্ষেপ নেওয়া।

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বনায়ন করতে হবে। কৃষিতে সার ও কীটনাশক যথাসম্ভব বা ব্যবহার করতে হবে। বেশি করে সবুজ সার ও জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি ও শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে করে সবুজ শিল্পায়নের বিপ্লব ঘটবে। তাই সবশেষে বলতে পারি যে, আমাদের সুন্দর ঘরণী রক্ষা করতে হলে পরিবেশবান্ধব শিল্পয়নের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে শিল্পায়ন ছাড়া জীবন চলবে না কিন্তু ধরণীকে রক্ষা করতে তথা মানব জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশবান্ধ শিল্পায়ন একান্ত জরুরী । 

2 years ago

বাংলা

**'Provide valuable content and get rewarded! 🏆✨**
Contribute high-quality content, help learners grow, and earn for your efforts! 💡💰'
Content

Related Question

View More

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম সভায় (২৪ নভেম্বর ২০২১) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশনের মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতিমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আরও বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হবে ।

এলডিসি থেকে বের হলে প্রথমে যে লাভটি হবে, তা হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। গরিব বা স্বল্পোন্নত দেশের তকমা থাকবে না। পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। হবে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বেশি সুদে অনেক বেশি ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। বেশি ঋণ নিতে পারলে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বেশি খরচ করতে পারবে বাংলাদেশ। আবার অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা মোকাবিলায় যথেষ্ট সক্ষমতা থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে। অবশ্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ পরিবেশ বড় ভূমিকা পালন করে ।

এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হবে রপ্তানি খাতে। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তো আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও (যেমন ভারত, চীন) এই ধরনের শুল্কসুবিধা পেয়ে থাকে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত । 

বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধশিল্প । এলডিসি থেকে বের হলে ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্ব বিধিবিধান আরও কড়াকড়ি হবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে দিতে হয় না। এর কারণ, মেধাস্বত্বের (পেটেন্ট) ওপর অর্থ দেওয়া হলে ওই ওষুধের দাম বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে এলডিসির গরিব নাগরিকেরা স্বল্পমূল্যে ওষুধ পাবে না। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এই সুবিধা বেশি পেয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধশিল্প একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। ২০৩৩ সালের আগে যদি কোনো দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে ওষুধ শিল্পের এই সুবিধা থাকবে না। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এই শেষ হয়ে যাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়। তখন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ পাওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশও এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। এ ছাড়া এলডিসি হিসেবে যেকোনো দেশ তার দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশ এখন কৃষি ও শিল্প খাতের নানা পণ্য বা সেবায় ভর্তুকি দেয়। এসব ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার চাপ আসতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ এখন যে রপ্তানি আয় বা রেমিট্যান্স আনায় নগদ সহায়তা দেয়, তা নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে ।

উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলোর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশকে এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি না থাকলে অন্যান্য দেশের রপ্তানিতে বাংলাদেশের এখনকার মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এলডিসি হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধাসহ অন্য যেসব অগ্রাধিকার পায়, তা যদি না থাকে তা হলে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। এ জন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায়, তার জন্য আমাদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কেন না শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে।

ভাষা শহীদদের অবদান উল্লেখপূর্বক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা কর

ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়নঃ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের আপামর ছাত্র সমাজের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে মাতৃভাষা বাংলা অর্জিত হয়েছে তার গণ্ডি এখন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং একুশে ফেব্রুয়ারি এবং ভাষা আন্দোলনের চেতনা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ভাষার জন্য বাঙালি জাতির এ আত্মত্যাগ আজ নতুন করে বিশ্বকে ভাবতে শিখিয়েছে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO) সাধারণ পরিষদে আমাদের জাতীয় চেতনার ধারক একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তের চেতনাবোধের বিজয়। ইউনেস্কোর গৃহীত প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং বহু ভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, তা ভাষাগত
এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন অনুধাবনের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।' আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং এর মাধ্যমে আমাদের ভাষা nআন্দোলনের চেতনার সাথে সংযোগ ঘটেছে বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের। আমাদের ভাষা আন্দোলন আজ শুধু বাংলাদেশ বা বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলন নয়, বিশ্বের যে জাতিই মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য আন্দোলন করুক না কেন, সেখানে উৎসাহ জোগানে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। অমর একুশের আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি বয়ে এনেছে অসাধারণ গৌরব। '৫২ থেকে ৭১' এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালি জাতি  স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন করেছিল তা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। সে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তারা প্রথমে বাংলা ভাষার উপরে আঘাত হানে। আর ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন নিয়ে বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়েই বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রেরণা যুগিয়েছে ভাষা আন্দোলনের রাজারাঙা ইতিহাস। ভাষার জন্য বাংলা মায়ের সন্তানদের আত্মত্যাগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আজ স্বীকৃতি লাভ করছে। UNESCO কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার গৌরব। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। এ শুধু বাংলা ভাষার বিশ্বায়নই নয় বরং বাঙালি জাতির বিজয়। আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ আমরা গর্ব করতে পারি। ভাষা আন্দোলনের আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে পারলেই বায়ান্নর শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে। 

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর ভূমিকা

ভূমিকাঃ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য অন্যতম উপাদান। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশের জাতীয় উন্নয়ন তত দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং এটার রাজধানী দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় রাজধানীর সাথে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হয় যেটা উন্নতির অন্তরায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা সেতু নির্মাণের দ্বারা দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চল রাজধানীর সাথে যোগাযোগ ফেরী ও লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতুর জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই সেতুটি দ্বারা সমগ্র দেশের সাথে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। যেটা দেশের উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পদ্মা সেতুঃ পদ্মা সেতু দেশের বৃহত্তর নদী পদ্মার উপর প্রস্তাবিত একটি বহুমুখী সেতু। এটা দেশের বৃহত্তর প্রকল্প এবং নির্মাণ পরবর্তী সময়ে এটা হবে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু। উত্তর দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া উপকূল এবং দক্ষিণ দিকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা উপকূল হল সেতুটির প্রস্তাবিত স্থান। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ২১.১০ মিটার যেটা রেল এবং বাস উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরী করা হবে।

জাতীয় উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়ন বলতে মূলত একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বোঝায়। শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থা, স্বাস্থ্য এমনকি খেলাধুলার উন্নতিও জাতীয় উন্নয়নের অংশ। এক কথায় কোন সরকার বা কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়ন । জাতীয় উন্নয়নে পদ্মা সেতুর প্রভাবঃ পদ্মা সেতুটি প্রধানত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের নিমিত্তে নির্মিত হবে। দেশের অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রাজধানী থেকে পরিচালিত হয় কিন্তু এ উন্নয়নের সুবিধাগুলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পদ্মা একটি বড় বাধা। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের কেন্দ্রীয় সুবিধা সমূহ এবং উক্ত এলাকাটির সম্ভাব্য উন্নয়ন হবে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের প্রভাবক। পদ্মা সেতু নির্মাণের যারা সৃষ্ট মাধ্যমে যে বিষয়গুলো জাতীয় উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল।

 প্রাথমিক উপকারভোগী ও তাদের সুবিধাঃ প্রত্যেকটি প্রকল্পেরই প্রাথমিক উপকারভোগী থাকে যারা এটি থেকে সৃষ্ট সুবিধাসমূহ ভোগ করতে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় তিন কোটি লোক বসবাস করে যারা পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রাথমিক উপকারভোগী। এ অঞ্চলের লোকজন ঢাকায় যাতায়াতে ফেরী এবং লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। মাওয়া জাজিরা ফেরী পয়েন্টে পারাপারে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। এই এলাকা থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা বা জরুরি আসা লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হয়। সেতুটি নির্মিত হলে এই এলাকার লোকজনের ঢাকা সহ সমগ্র দেশে যাতায়াত সহজ হবে যেটা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায় ও প্রযুক্তি সহ সার্বিক উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

বহুমুখী যোগাযোগ সুবিধা ও তার প্রভাবঃ পদ্মা সেতু বাস ও রেল উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরি হবে। এটির মাধ্যমে শুধু যাতায়াতেরই সুবিধা হবে না বরং এটি টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এ সকল সুবিধা সমূহ দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে প্রভাবিত করবে। 

ব্যবসায়িক সুবিধাঃ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসায় উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়িক অবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে যেটা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজ হবে ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে। এলাকাভিত্তিক ব্যবসায়ের উন্নতি সবসময় জাতীয় অর্থনীতির উন্নতির কারণ হিসেবে কাজ করে ফলে জাতীয় উন্নয়নের মানও উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়।

মংলা বন্দরের উপর প্রভাবঃ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি নৌবন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত। এটি হল মংলাবন্দর এবং এটার সংশ্লিষ্ট পরিবহন ব্যবস্থার পদ্মা সেতু ব্যবহারের বিকল্প নেই। সেতু দ্বারা সৃষ্ট যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি দ্বারা বন্দরটির সভাবা উপযুক্ত গ্রহণযোগ্যতা ও উপকারিতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ নদী পথে বাণিজ্য করা সাথে অধিক ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরী করতে পারবে ফলে দেশের সার্বিক বাণিজ্যের উন্নতি সাধিত সেটা জাতীয় উন্নয়নের কার্যকরী প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। 

জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নঃ জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়নের বৃদ্ধি ঘটায়। আর পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন ধাপে উন্নয়নে সহযোগিতা করে। পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগিতা করে, যেমনঃ

উৎপাদন বৃদ্ধিঃ সেতুটির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবে কারণ তখন তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো সমগ্র দেশে পৌছাতে বর্তমান সময়ের চেয়ে সহজ হবে। প্রতিযোগতি বৃদ্ধিঃ এই এলাকায় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগী হয়ে উঠবে। এতে পণ্যের সার্বিক মান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্র ও বিস্তৃত হবে।

জমির মান বৃদ্ধিঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণে এই এলাকায় জমির মান ও বৃদ্ধি পাবে কারণ সেগুলো পূর্বের তুলনায় যে কোন কাজের জন্য অধিক যথোপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। 

উপসংহারঃ জাতীয় উন্নয়ন মূলত জাতীয় অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল এবং যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের প্রভাবক। তনুপরি পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হবে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। 

ঋণ খেলাপীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পদক্ষেপ সমূহ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে কর্কট রোগের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার সঙ্গে তুলনা করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিপিডি। পর্যবেক্ষণটি অস্বীকার কিংবা উপেক্ষা করার মতো নয়। এত দিন কেবল গুলখেলাপকেই ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বলখেলাপি সংস্কৃতির প্রধান নিয়ামকগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই খাত সুশাসনের অধোগতি। খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, পরবর্তী তিন মাসে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ নির্ধারণের সময় আমরা সব সময় অবলোপন করা পরিমাণ বিস্মৃত হয়ে থাকি, যদি আদর-দুরূহ খেলাপি বলেই ঋণ অবলোপন করা ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যুক্ত করে হিসাব করি, তাহলে দেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। খেলাপি ঋণের বিপদের সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি। এটি তখনই ঘটে যখন কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এমন হারে বেড়ে যায়, যার বিপরীতে সংস্থান রাখার মতো যথেষ্ট মুনাফা হয় না। মার্চ ২০১৭ প্রান্তিকের শেষে ব্যাংকগুলোর মোট প্রভিশনের প্রয়োজনীয়তা ছিল ৪১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যার বিপরীতে সব ব্যাংক মিলে সংরক্ষণ করতে পেরেছে মোট ৩৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সাধারণ পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রভিশন হচ্ছে বিভিন্ন মেয়াদের খেলাপি ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন হারে রাখা। মন্দঋণ এই সংস্থান রাখতে হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ যত বাড়াবে, তার সঙ্গে বাড়াবে সংস্থানের পরিমাণ এবং কমবে বণ্টনযোগ্য মুনাফা তথা লভ্যাংশের পরিমাণ। সাধারণের একটা ভুল ধারণা হচ্ছে ঋণ অবলোপন করা কিংবা খেলাপি ঋণের সংস্থান রাখা হয় জনগণের আমানত থেকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে সংস্থান ব্যাংকের মুনাফা থেকেই সরিয়ে রাখতে হয়। সংস্থান থেকে ঋণ অবলোপন করা হয় বলে ক্ষতিগ্রস্থ হন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০, ৫০ এবং ১০০ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এমনকি খেলাপি হনত এখন ঋণের বিপরীতেরও ঋণের প্রকারভেদে ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে সাধারণ সংস্থান রাখতে হয়। অবশ্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোনো অস্থাবর সংম্পদ থাকলে তার মূল্যের অর্ধেক কিংবা নগদ জামানত থাকলে তার পূর্ণ মূল্য প্রয়োজনীয় সংস্থান থেকে বাদ দিয়ে সংরক্ষণের সুযোগ আছে।

আমাদের খেপি ঋণ, সংস্থান ও মূলধন ঘাটতি, মুনাফা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার কারণে ঋণ ব্যবস্থাপনায় আপস এবং সর্বোপরি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন অন্তরায় যে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটা নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেটি উপলব্ধি করার জন্য সূক্ষ্ম গবেষণা কিংবা বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রয়োজন হয় না। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এই খাতটিকে শক্ত ভিত্তির ওপর তুলে আনতে না পারলে আমাদের যাবতীয় অর্থনৈতিক অর্জন হুমকির মুখে পড়বে, এটি বিবেচনায় রেখেই সব পক্ষকে উপলব্ধি করতে হবে যে একটি দুর্বল ব্যাংকিং খাত নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

অনলাইন ব্যাংকিং

বর্তমানে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড একমূহূর্তের জন্য পরিচালনার কথা ভাবা যায় অসম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ আমাদের ব্যাংকিং খাত। এখানে যাবতীয় লেনদেন হিসাব-নিকাশ, অর্থ স্থানান্তরসহ সব কাজই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। মাত্র কিছু সময়ের জন্য যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ত্রুটি-বিচ্যুতির কারনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে তাহলে একটি ব্যাংকের চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের যে ক্ষতি হয় সেটা কোনো না কোনোভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু একটি ব্যাংকের অনলাইন ভিত্তিক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই ব্যাংকের পক্ষে একদিনও টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই আজ ব্যাংকিং খাতে তথ্য প্রযুক্তির অবদান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য ও প্রযুক্তির (আইসিটি) কারনে দেশে প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমের লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন।

এর ব্যাংক খাতের সামগ্রিক ও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, অন্যদিকে এই খাতের মুনাফা বৃদ্ধিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্ভুল লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়াতেও আইসিটির ব্যবহার
অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথাগত ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে এখন বছরে গড়ে ১৭০ কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারনে অনলাইনে ২০০ কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারণে অনলাইনে একজন কর্মী এখন বছরে গড়ে ১০ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করছেন। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের একজন কর্মীর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজারের কম। অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আবার আইসিটিতে বিনিয়োগ ব্যাংক খাতের জন্য অবশ্যই লাভজনক। ব্যাংকের আইসিটি খাতে এক টাকা খরচ করলে তা কতোটা মুনাফা নিয়ে আসে তা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিটিতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের জন্য তা ১৩৬ টাকা সমান উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। এর বিপরীতে প্রযুক্তি বহির্ভূত খাতে এক টাকা খরচ করলে সেটি ৫৮ টাকার সমপরিমাণ উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসে। একইভাবে আইসিটি বিষয়ে জ্ঞান আছে, এমন একজন কর্মীর পেছনে এক টাক কচ করা হলে ব্যাংকের তায় বাড়ে ২৫ টাকার সমান। মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বীরে ধীরে আইসিটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সে সময় লাংকের একজন কর্মী গড়ে ৪১ কোটি টাকা লেনদেন করতেন। সেই ২০১৫ সালে বেড়ে ১৬০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ লেনদেন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে একজন কর্মীর আর্থিক লেনদেনের দক্ষতার এ সময়ে প্রায় চারগুণ বেশি বেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকের মুনাফাও বেড়ে গেছে একথা আজ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ক্যাশ, রেডি ক্যাশ মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টধারীরা অতি সহে ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন। এম আই সি আর ও সি আর চেকের আবির্ভাবে চেক জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাস, পাখি বিল সহ অনলাইন মার্কেটিং এর সুবিধা ব্যাংক তথ্য প্রযুক্তির আশীর্বাদ হিসাবধারীদের দিতে পারছে। ফলে দেশের ব্যাতি খাতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিন
দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ত্রুটি অনিয়ম ও সম্ভাৰা সকল ঝুঁকি এড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়ে আরে এগিয়ে যাবে, এই হোক আমাদের সবার একান্ত প্রত্যাশা। 

ঋণ খেলাপির সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

  •  বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে তার CIB System কে আরো শক্তিশালী করে তা বাস্তবায়নের জন্য জোর সুপারিশ করবে প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে।
  • ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যাংক KYC Rules টি পুরোপুরিভাবে পালন করবে এবং এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী Monitoring committee থাকবে।
  • রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ প্রদানে ঝুঁকির ক্ষেতগুলো চিহ্নিত করে তা ব্যাংকগুলোকে পালনের জন্য জোর তাগিদ দিতে হবে। 
  • বড় বড় খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য মরে ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্ক হতে হবে এবং এসকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুপারিশ পুরোপুরি অগ্রাহ্য করতে হবে।
  • যেহেতু সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তাই Luss এ থাকা সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে পেয়ার এখনই উত্তম সময়। সর্বোপরি, অর্ণ খেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেও এই খেলাপি ঋণের প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। 
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...